সাইবার অপরাধ এবং বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের আইন ও দন্ডবিধি । আপনিও হতে পারেন এর শিকার । জানতে বিস্তারিত পড়ুন ।

Ad Code

সাইবার অপরাধ এবং বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের আইন ও দন্ডবিধি । আপনিও হতে পারেন এর শিকার । জানতে বিস্তারিত পড়ুন ।

 

Cyber law
Cyber crime & cyber law in Bangladesh .

আজ আমরা জানবো বাংলাদেশের সাইবার আইন সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু । আমার জানবো -

✓ সাইবার অপরাধ কি ?

✓ সাইবার আইন কি ?

✓ সাইবার ক্রাইমের দন্ড বা শাস্তি কি ?

✓ কিসে হয় সাইবার অপরাধ ?

✓ সাইবার অপরাধের দায়ে ফেসে গেলে করনীয় কি , মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলে কি করবেন ? 


প্রথমেই আমরা জানবো সাইবার অপরাধ কি? 

Cyber Crime
Cyber Crime

সাইবার অপরাধঃ 

   সাইবার অপরাধ এমন একটি অপরাধ যা কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত ।

 অর্থাৎ মোবাইল ফোন , কম্পিউটার বা পিসি , ইন্টারনেট বা যেকোনো ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে এমন মানহানী কাজ করা যাতে করে - কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় , ব্যক্তিগত বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অন্যান্য যে কোন ক্ষতি হতে পারে - এমন সবধরনের কাজকেই সাইবার অপরাধ বলে ।

 এ অপরাধ সংঘটনের জন্য কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় আবার টার্গেক হিসেবেও থাকে অন্য আরেকটি কম্পিউটার ! আর সবচেয়ে বড় মিডিয়া হিসেবে কাজ করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট ।

মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে কিংবা ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে অ্যাকাউন্ট( আইডি ক্লোনিং) খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে, এমনকি লাইক, শেয়ার বা রিয়েক্ট দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে ।

অনলাইন ব্যবহারে সাবধান বা সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই। একটু অসচেতন হলেই ফেঁসে যেতে পারেন সাইবার অপরাধের দায়ে।

 জেনে বুঝে হোক বা না জেনে , না বুঝে হোক , আপনি যদি ইন্টারনেটে কোনো অপরাধ করে ফেলেন, তাহলে এর জন্য আপনাকে দিতে হতে পারে কঠিন মাশুল। 

 

সাইবার অপরাধের আইন ও শাস্তির বিধানঃ

 

Cyber law
Cyber law in Bangladesh.

  সাইবার অপরাধীর বিচারে দেশে কঠিন আইন রয়েছে । যদিও আইনটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবুও যে আইন বিদ্যমান, তার প্রয়োগও বিদ্যমান এটা বাস্তব । 

  আর এ আইনের নাম হচ্ছে - " তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)। "

আইনে যে শাস্তিঃ

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৪ ধারা অনুযায়ী -

কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদির ক্ষতি, 

অনিষ্ট সাধন যেমন ই-মেইল পাঠানো, ভাইরাস ছড়ানো, সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ বা সিস্টেমের ক্ষতি করা ইত্যাদি অপরাধ। 

এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। 


  ✓ ৫৬ ধারায় বলা হয়েছেঃ - কেউ যদি ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এমন কোনো কাজ করেন, যার ফলে কোনো কম্পিউটার রিসোর্সের কোনো তথ্য বিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা এর উপযোগিতা হ্রাস পায় অথবা কোনো কম্পিউটার, সার্ভার, নেটওয়ার্ক বা কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন, তবে এটি হবে হ্যাকিং অপরাধ -

    যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

    

  ✓ ৫৭ ধারায় বলা হয়েছেঃ  কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোনো মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে এগুলো হবে অপরাধ।

  এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর / (১০ বছর) কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

   

  [ লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ]


এছাড়াও পর্ন গ্রাফি আইন - ২০১২ তে বর্ণিত আছে যে, কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্ণগ্রাফি সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ দন্ডে দন্ডিত হবেন ।

  


কিসে হয় সাইবার অপরাধঃ 

Social media
Social media

ফেসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারও নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে, কোনো স্ট্যাটাস দিলে কিংবা শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে। 

   কাউকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হুমকি দিলে, অশালীন কোনো কিছু পাঠালে কিংবা দেশবিরোধী কোনো কিছু করলে তা সাইবার অপরাধ হবে। 

   আবার ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হ্যাক করলে, ভাইরাস ছড়ালে কিংবা কোনো সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করলে সাইবার অপরাধ হতে পারে।

    এ ছাড়া অনলাইনে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তা-ও সাইবার অপরাধ।


অপরাধের শিকার হলে কিংবা ফেঁসে গেলে করনীয়ঃ

Involved


কোনো কারণে আপনি যদি সাইবার অপরাধের শিকার হন, তাহলে আপনার নজরে আসা মাত্রই আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিষয়টি অবগত করে রাখতে পারেন। 

 প্রয়োজনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখতে পারেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেও (বিটিআরসি) লিখিতভাবে জানিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে কেউ আপনাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করলে আপনি কিছুটা সুরক্ষা পেতে পারেন। 

   আপনি যদি সাইবার অপরাধের গুরুতর শিকার হন এবং প্রতিকার পেতে চান, তাহলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর আশ্রয় নিতে পারেন। এ আইনের আওতায় থানায় এজাহার দায়ের করতে পারেন।

    আপনার ওয়েবসাইট কেউ হ্যাক করলে, ফেসবুক বা অন্য যেকোনো মাধ্যম হ্যাক হলে এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কেউ চুরি করলে কিংবা অন্য কোনো অপরাধের শিকার হলে দেরি না করে কাছের থানায় জানিয়ে রাখা উচিত। 

    যদি সাইবার অপরাধের অভিযোগে মিথ্যাভাবে ফেঁসে যান, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বুঝিয়ে বলতে হবে যে আপনি পরিস্থিতির শিকার। 

    যদি আদালতে আপনাকে প্রেরণ করা হয় তাহলে আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে যেতে হবে। যদিও এটা সত্য যে আইনে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে; যার ফলে এ আইনের অপব্যবহারও ঘটছে। তাই আইনের আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি সচেতন হওয়া জরুরি। অর্থাৎ অনলাইন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করলে আপনাকে অবশ্যই ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে । তার জন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে কিছু জানা প্রয়োজন ।

    ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন , নিরাপদে থাকবেন । 

    ধন্যবাদ ।


Thank you





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ