জেলা পরিষদের সদস্যদের বেতন কত ? তাদের যোগ্যতা ও কাজ

Ad Code

জেলা পরিষদের সদস্যদের বেতন কত ? তাদের যোগ্যতা ও কাজ

 জেলা পরিষদের সদস্যদের বেতন কত ? তাদের যোগ্যতা ও কাজ।


জেলা পরিষদ সদস্যদের বেতন কত? জেলা পরিষদ সদস্যদের নির্বাচনের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা এবং তাদের কাজ কি? এসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এই পোস্টটিতে।



অনেকে জেলা পরিষদ সদস্যদের বেতন কত জানতে চান। আবার অনেক জেলা পরিষদ সদস্যদের যোগ্যতা এবং তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে চান। তো চলুন জেনে নিই বিস্তারিত। সরাসরি সরকারি নোটিশ ও বিশ্বস্ত খবর মাধ্যম থেকে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরা হলো।


প্রথমে আমরা জানবো জেলা পরিষদ সদস্য কতজন?


জেলা পরিষদ আইন,২০০০ এ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে ০১ (এক) জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ০৫ (পাঁচ) জন মহিলা সদস্য সমন্বয়ে পরিষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। সুতরাং মোট ২১ জন সদস্য নিয়ে একটি জেলা পরিষদ সংগঠন তৈরি হয়।


জেলা পরিষদ আইনে উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সচিব প্রেষনে পরিষদে ন্যস্ত রাখার বিধান আছে।


তবে সাম্প্রতিক এই বিষয়টি সামান্য একটু পরিবর্তনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব। এখন চলুন জেনে নেয়া যাক জেলা পরিষদ সদস্যদের কার কেমন বেতন!


জেলা পরিষদ সদস্যদের বেতন-

খুব সাধারণ ভাবেই জেলা পরিষদ সদস্যদেরও পদমর্যাদার ভিত্তিতে বেতন দেয়া হয়ে থাকে।

অর্থাৎ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদের বেতন ভিন্ন ভিন্ন। তাই প্রথমে জেনে নিই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বেতন কত?


জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বেতন-

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানী ৫৪ হাজার টাকা ও আপ্যায়ন পাঁচ হাজার টাকা। ২০১৭ সাল থেকে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে এই বেতনটি নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানেও অর্থাৎ ২০২৩ সালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ৫৪ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।


জেলা পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের বেতন-

সর্বশেষ তথ্য মতে অন্যান্য সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। বর্তমানেও তা বহাল আছে। অর্থাৎ ২০২৩ সালেও প্রত্যেক সদস্যের মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা।

সাম্প্রতিক জেলা পরিষদ সদস্যদের সংখ্যার পরিবর্তন ও নতুন আইন করার ব্যাপারে জানা গেছে।

জেলা পরিষদে সদস্য সংখ্যা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে জাতীয় সংসদে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে জেলার অন্তর্গত উপজেলার সমানসংখ্যক সদস্য ও এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মেয়াদ শেষ হলে জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগের বিধানও রাখা হয়েছে। 

বিদ্যমান আইনে শুধু নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের কোনো বিধান নেই। প্রস্তাবিত আইনে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কোনো জেলা পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


জেলা পরিষদ সদস্যদের কাজ

কী কাজ করবেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা?

 আইন অনুযায়ী, পরিষদ ১২টি বাধ্যতামূলক কাজ করার কথা। 

এরমধ্যে রয়েছে জেলার সব উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা; 

  1. উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা; 
  2. উদ্যান, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ। 
  3. এ ছাড়া শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক কল্যাণসহ সাতটি ক্ষেত্রে ৬৮ ধরনের ঐচ্ছিক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। 

আর ২০১৬ সালের জেলা পরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিধিমালায় সদস্যদের ১৫ ধরনের কাজের কথা উল্লেখ রয়েছে।


সাতটি ক্ষেত্রে ৬৮ ধরনের ঐচ্ছিক কাজ নিয়ে আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত জানবো ।


এবার আমরা জেলা পরিষদ সদস্য হবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এ পার্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন ।



চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যগণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতাঃ

যোগ্যতাঃ 

(১) উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, কোন ব্যক্তি চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন, যদি-


(ক) তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হন;

(খ) তাঁর বয়স পঁচিশ বৎসর পূর্ণ হয়; এবং

(গ) তাঁর নাম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত আপাততঃ বলবৎ ভোটার তালিকার যে অংশ সংশ্লিষ্ট জেলাভুক্ত অথবা, ক্ষেতমত, উক্ত জেলার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডভুক্ত এলাকা সংক্রান্ত সেই অংশের অর্ন্তভুক্ত থাকে।


অযোগ্যতাঃ

(২) কোন ব্যক্তি চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবার এবং থাকার যোগ্য হবেন না, যদি-

 

(ক) তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন বা হারান;

(খ) তাহাকে কোন আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করে;

(গ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন;

(ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্থ হয়ে অন্যুন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে;

(ঙ) তিনি প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের বা অন্য কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোন কর্মে লাভজনক সার্বক্ষণিক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন;

[*** (চ) তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য বা অন্য কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য বা জেলা পরিষদের প্রশাসক হন বা থাকেন:

তবে শর্ত থাকে যে, জেলা পরিষদের প্রশাসক পদত্যাগ সাপেক্ষে নির্বাচনে প্রার্থী হইতে পারিবেন;]

(ছ) তিনি পরিষদের কোন কাজ সম্পাদনের বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার হন বা ইহার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা পরিষদের কোন বিষয়ে তাঁহার কোন প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে বা তিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অত্যাবশ্যক কোন দ্রব্যের দোকানদার হন;

(জ) তিনি একইসঙ্গে চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যের দুই বা ততোধিক পদে প্রার্থী হন;

(ঝ) তাঁহার নিকট কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃহীত কোন ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী থাকে।



এবার আমরা জানবো জেলা পরিষদের মেয়াদ কত ?

পরিষদের মেয়াদঃ

ধারা ৬১ এর বিধান সাপেক্ষ, পরিষদের মেয়াদ উহার প্রথম সভার তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর হবে।




সবশেষে জেলা পরিষদের সম্পূর্ণ বিষয়টি আরো পরিস্কার করতে ধারা ও আইনী উৎস থেকে তথ্যবহুল আলোচনা তুলে ধরা হলো -


সংক্ষিপ্ত শিরোনামা, প্রবর্তন ও প্রয়োগ

১৷ (১) এই আইন জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ নামে অভিহিত হবে৷

(২) সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে ইহা বলবৎ হইবে৷

[ * এস, আর, ও নং ২৩৯-আইন/২০০০, তারিখ: ২৪ শে জুলাই, ২০০০ ইং দ্বারা ১১ই শ্রাবণ, ১৪০৭ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২৬শে জুলাই, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ উক্ত আইন কার্যকর হইয়াছে। ]

(৩) ইহা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলাসমূহ ব্যতীত বাংলাদেশের অন্য সকল জেলায় প্রযোজ্য হবে৷


পরিষদ গঠন

[(১) নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে পরিষদ গঠিত হইবে, যথাঃ-


(ক) একজন চেয়ারম্যান;

(খ) সংশ্লিষ্ট জেলার মোট উপজেলার সমসংখ্যক সদস্য;

(গ) দফা (ক) ও (খ) এ উল্লিখিত সদস্য-সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণ সংখ্যায়) নারী সদস্য:


তবে শর্ত থাকে যে, তাহাদের সংখ্যা ২ (দুই) এর কম হইবে না; এবং

(ঘ) সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ক্ষেত্রমত, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিনিধি পদাধিকারবলে সদস্য।]


(২) চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যগণ ধারা ১৭ এর অধীন গঠিত নির্বাচক মণ্ডলীর ভোটে নির্বাচিত হইবেন৷

(৩) চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যগণ নির্ধারিত পারিশ্রমিক, বিশেষ অধিকার, ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবেন৷


উপসংহারঃ 

আপনারা জানলেন জেলা পরিষদ আইন,২০০০ এ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে চেয়ারম্যান, সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য সমন্বয়ে মোট ২১ জন নিয়ে পরিষদ গঠনের বিধান রাখা আছে। বর্তমানে এ আইনের একটু পরিবর্তন হয়েছে যা সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে । এছাড়াও জেলা পরিষদ আইনে উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সচিব প্রেষনে পরিষদে ন্যস্ত রাখার বিধান আছে। আরো জানলেন জেলা পরিষদ সদস্যদের যোগ্যতা অযোগ্যতা এবং বেতন নিয়ে । সবকিছু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের ওয়েবসাইটটিতে আপনার জন্য সম্পূর্ণ নির্ভুল ও তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ

 পোস্ট করার চেষ্টা করা হয়। চাইলে দেখে নিতে পারেন অথবা সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ